খেলাধুলা

ইংল্যান্ডকে কাঁদিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন

নবম নারী ফুটবল বিশ্বকাপ

খেলা ধুলা ডেস্ক:

বছরখানেক আগে বিদ্রোহে মূল দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড় হারিয়ে ফেলে স্পেন। যে কারণে এবার অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত নবম নারী বিশ্বকাপে ফেভারিটের তালিকায় ছিল না দেশটি। কিন্তু সেই দলটিই অবিশ্বাস্য ধারাবাহিক পারফর্ম্যান্স ও রূপকথার গল্প লিখে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কীর্তি গড়েছে।

রবিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত নারী বিশ্বকাপের ফাইনাল মহারণে ফেভারিট ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়েছে স্পেনের স্বর্ণকন্যারা। সিডনির স্টেডিয়াম অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ম্যাচে নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়দের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন স্পেন অধিনায়ক ওলগা কারমনা।

উপভোগ্য ম্যাচটি প্রায় ৭৬ হাজার দর্শক স্টেডিয়ামে বসে উপভোগ করেন। যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে, জার্মানি ও জাপানের পর পঞ্চম দল হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছে স্পেন। এবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে প্রতিটি পথচলাতেই রেকর্ড গড়তে থাকেন লা রোজা মেয়েরা। কেননা এর আগে দেশটি দুইবার বিশ্বকাপে অংশ নিলেও প্রথমবার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়। দ্বিতীয়বার খেলে শেষ ষোলোতে। এবার প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল পেরোনোর পর থেকে একের পর এক বিস্ময় জন্ম দিয়েছেন স্পেনের টগবগে কন্যারা। কোয়ার্টার ফাইনালে হল্যান্ডকে বিদায় করার পর সেমিফাইনালে সুইডেনকে হারিয়ে ফাইনাল মঞ্চে উঠে আসে। ফাইনালে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় গত কয়েক বছর দুর্দান্ত খেলা ও সবশেষ ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে। ম্যাচে ফেভারিট হয়েই মাঠে নামেন ইংলিশ মেয়েরা।

কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে সব হিসেব-নিকেশ উল্টে দিয়েছেন অদম্য স্প্যানিশ নারীরা। পুরো ম্যাচে চোখ ধাঁধানো পারফর্ম্যান্স প্রদর্শন করে সব বিভাগে ইংলিশদের পেছনে ফেলে যোগ্যতর দল হিসেবেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। এর আগে ২০১০ সালে পুরুষরা প্রথমবার স্পেনকে বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা উপহার দিয়েছিলেন। ১৩ বছর পর মেয়েদের সৌজন্যে আরেকবার বিশ্বজয়ের স্বাদ পেয়েছে দেশটি। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের আরেকটি বিশ্বকাপ জয়ের অপেক্ষা আরও বেড়েছে। ১৯৬৬ সালে ছেলেদের বিশ্বকাপ জয়ের পর এবারই প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে আসে ইংল্যান্ডের কোনো দল। ২০২২ সালে ইউরো জয়ের অভিজ্ঞতা নিয়েও বিশ্বমঞ্চে পেরে ওঠেননি ইংলিশ মেয়েরা। ২০ জুলাই শুরু হয়ে এক মাসের লম্বা টুর্নামেন্টের অল-ইউরোপিয়ান ফাইনালে খেলেছে স্পেন ও ইংল্যান্ড। পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেলা উপহার দিলেও ফাইনালে এসে যেন বোতলবন্দি হয়ে ছিলেন এলা টনি আর লরেন হ্যাম্পরা। বিপরীতে ছন্দময় ফুটবল দিয়েই বাজিমাত করেছেন স্প্যানিশ মেয়েরা। ম্যাচের শুরু থেকেই ইংলিশদের চাপে রাখে স্পেন। বল পজিশন থেকেই শুরু করে গোলে শট, সবখানেই আধিপত্য ছিল স্প্যানিশদের। যদিও ম্যাচের প্রথম বড় সুযোগ পায় ইংল্যান্ড। দলের ম্যানসিটি স্ট্রাইকার লরেন হ্যাম্পের জোরালো শট ফিরে আসে ক্রসবারে লেগে। এমন সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পরেই যেন ভেঙে পড়ে ইংলিশদের মনোবল। বিপরীতে আক্রমণের ধার বাড়ায় স্পেন। ম্যাচের প্রথম বিশ মিনিট পর্যন্ত ৮০ শতাংশ বল রেখেছিল নিজেদের পায়েই। আক্রমণের সেই ধারাতেই ২৯ মিনিটে কাক্সিক্ষত গোল পায় স্পেন। দারুণ সংঘবদ্ধ আক্রমণে ডি বক্সের মাথা থেকে বাম পায়ের কোনাকুনি শটে গোলটি করেন অধিনায়ক ওলগা কারমনা (১-০)।

গোল করার পর আরও বেশি আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয় স্পেন। বল পজিশন ধরে রেখে একের পর এক আক্রমণে ইংলিশ রক্ষণভাগকে দিশেহারা করে তোলে। বিরতির পর দুই পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে ইংল্যান্ড। লরেন জেমস আর ক্লোয়ি কেলিকে মাঠে নামান কোচ ওয়েগম্যান। যদিও অতি আক্রমণাত্মক মানসিকতার সুফল তারা পায়নি। উল্টো ব্যবধান বাড়ানোর মতো আরও কয়েকটি ভালো সুযোগ পায় স্পেন। দুইবার তো গোল পেতে পেতে পায়নি তারা। দুইবারই স্পেনকে গোলবঞ্চিত করেছেন ইংলিশ গোলরক্ষক মেরি ইয়ার্পস। প্রথমে কালডেন্টির একক প্রচেষ্টায় নেওয়া দারুণ শট ফিরিয়ে দেন। পরে ৬৯ মিনিটে জেনিফার হারমোসোর পেনাল্টিও অসাধারণ দক্ষতায় প্রতিহত করেন। যে কারণে টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষকও হয়েছেন ইলিশ ইয়ার্পস। মূলত ইংল্যান্ডকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করেন এই ইয়ার্পসই। কিন্তু দলের ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাদের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button