জাতীয়

আগে আন্দোলন ছিলো ডাল-ভাতের জন্য, এখন দাবি মাছ-মাংসের দাম কমানোর – তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী

সময়ের চিত্র ডেস্ক : তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহ্‌মুদ বলেছেন, ‘দেশ এখন বদলে গেছে, মানুষের ভাগ্যও পরিবর্তন হয়েছে। গ্রাম এখন শহরে পরিণত হয়েছে। আগে মানুষ আন্দোলন করতো ডাল-ভাতের জন্য। আর এখন মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হওয়ায় মাছ-মাংসের দাম কমানোর জন্য দাবি তোলে।’

শুক্রবার চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিলক এম শাহ আলম চৌধুরী ডিগ্রী কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত চার ইউনিয়নের তৃণমূল প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

হাছান মাহ্‌মুদ বলেন, ‘দেশের প্রতিটি গ্রাম-মহল্লায় পর্যন্ত যে উন্নয়ন হয়েছে তা সবার কাছে বলতে হবে। যারা শুধু ভোট আসলে লাফালাফি করে, লুকিয়ে লুকিয়ে শহরে গিয়ে খালেদা জিয়ার নামে স্লোগান দেয়, তারা যে সড়ক কিংবা ব্রিজের উপর দিয়ে যায় সেটিও আওয়ামী লীগের করা। করোনাসহ কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে তাদের পাওয়া যায়নি, তাদের বয়কট করে আগামীতেও সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে হবে।’

দলের সাংগঠনিক বিষয়ে দৃক্‌পাত করে মন্ত্রী বলেন, ‘তৃণমূলের নেতারাই আওয়ামী লীগের প্রাণ। গ্রামে-গঞ্জে-মহল্লায় আমাদের দলকে এই নেতারাই ধরে রেখেছেন। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-ঘাটে মাঠে সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাঙ্গুনিয়াসহ সারা দেশে সরকারের অভূতপূর্ব উন্নয়নের দাবিদার তৃণমূলের নেতারাও। দলের সুনাম বজায় রাখতে আমাদের দলের নাম বিক্রি করে কেউ যদি অপকর্ম করে তাদের ছাড় দেয়া হবে না, প্রকাশ্যে শায়েস্তা করতে হবে।’

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু জাফরের সভাপতিত্বে এবং এমরুল করিম রাশেদ ও মাহমুদুল হাসান বাদশার যৌথ সঞ্চালনায় আওয়ামী লীগ নেতা স্বজন কুমার তালুকদার, আবুল কাশেম চিশতি প্রমুখ সভায় বক্তব্য দেন।

 

দেশের সমৃদ্ধি যাদের পছন্দ হয় না, তারাই বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার চালায় :তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী

 

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহ্‌মুদ বলেছেন, অব্যাহতভাবে দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, দরিদ্রতা কমছে, দেশের সমৃদ্ধির সাথে প্রতিটি মানুষের সমৃদ্ধি এবং স্বচ্ছলতা এসেছে, বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অনেকের পছন্দ হয় না।

মন্ত্রী বলেন, ‘সেজন্য দেখা যায়, কিছু কিছু পত্রিকায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নেগেটিভ রিপোর্ট করা হয়। বিদেশ থেকে চিহ্নিত ব্যক্তিবিশেষ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু এতে বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখা যায়নি।’

শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজী পুকুর পাড়ের বাসায় সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্য জগতের প্রসিদ্ধ মার্কিন গণমাধ্যম সংস্থা ব্লুমবার্গের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে হাছান মাহ্‌মুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে করোনা মহামারি এবং বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যেও দেশ যেভাবে এগিয়ে চলেছে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যেভাবে অব্যাহত আছে, পৃথিবীর বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এটির প্রশংসা করছে। সম্প্রতি ব্লুমবার্গ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সেখানে তারা বলেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্জিত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং করোনার মধ্যেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষমতার কারণে আগামী নির্বাচনেও জননেত্রী শেখ হাসিনার জয়লাভের সম্ভাবনা এবং তিনি চতুর্থ মেয়াদের মতো নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।’

মন্ত্রী বলেন, ‘গত পরশুদিন আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন আমাদের দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করা মানুষের সংখ্যা ছিল ৪১ শতাংশ, কিছুদিন আগে সেটা কমে ২০ শতাংশে নেমেছিল। এই করোনা মহামারি এবং বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যেও এখন সেটি কমে ১৬ শতাংশে দাড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দরিদ্রতা ১৭ শতাংশ।’

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) রিপোর্ট উদ্ধৃত করে হাছান মাহ্‌মুদ বলেন, এই করোনা মহামারির মধ্যে আমাদের মাথাপিছু আয় ভারতকে ছাড়িয়েছে এবং ২০০৯ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি তখন আমাদের অর্থনীতির আকার ছিল পৃথিবীর ৬০তম, এখন আমরা জিডিপিতে পৃথিবীর ৩৫তম অর্থনীতির দেশ। গত ১৪ বছরে আমরা ২৫টি দেশকে অতিক্রম করেছি। সেই ২৫টি দেশের মধ্যে মালয়েশিয়াও আছে। আর পিপিপিতে আমরা পৃথিবীর ৩১তম অর্থনীতি।

ড. হাছান মাহ্‌মুদ উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আজকে বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যে যেখানে যুক্তরাজ্য এবং কন্টিনেন্টাল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পণ্যের সংকট হয়েছে, আমাদের দেশে কোনো পণ্যের সংকট হয়নি। ইউরোপের সুপার মার্কেটে একসাথে এক লিটারের বেশি ভোজ্য তেল, ছয়টার বেশি ডিম কিনতে দেয়া হয় না, কারণ সেখানে পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের দেশে পণ্যের মূল্য বেড়েছে, কিন্তু পণ্যের সংকট তৈরি হয়নি। এখানেই তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য।’

দোষটা তাদের, যারা কূটনীতিকদেরকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য অনুনয় করে’

দৈনিক প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানের গ্রেপ্তার বিষয়ে আমেরিকাসহ ১২টি দেশ বিবৃতি দিয়েছে, এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহ্‌মুদ বলেন, ‘১২টি দেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি তাদের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। ভারতের দিকে তাকানোর অনুরোধ

করে তিনি বলেন, সেখানে কয়েকদিন ধরে বিবিসির কার্যালয়ে তল্লাশি করা হয়েছে, সেখানে কি এ ধরনের বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ, বিবৃতি দেওয়া হয়েছে? দেয়া হয়নি। কারণ ভারত বড় দেশ, ভারতের শক্তি সামর্থ্য বেশি, সেজন্য সেখানে সেই সাহস দেখাতে পারেনি।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রয়োজনে কূটনীতিকদেরকে আচরণ সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশন স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে। আমরা বাজেটের জন্য ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে কারো দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াই না। বরং আমাদেরকে সাহায্য দেওয়ার জন্য তারাই এখন অর্থের ঝুলি নিয়ে আমাদের কাছে আসে। আমাদেরকে খাটো করার সময় চলে গেছে।’

বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে ইফতারে বিএনপির মহাসচিব দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তাদের সহায়তা কামনা করেছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ড. হাছান মাহ্‌মুদ বলেন, ‘আমরা তো প্রথম থেকেই বলে আসছি তারা জনগণের কাছে যায় না, তারা বিদেশি কূটনীতিকদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে পদলেহন করে। আমি আশা করেছিলাম তারা দুস্থ মানুষের সাথে ইফতার করবে, সেটি না করে ফাইভ স্টার হোটেলে বসে কূটনীতিকদের সাথে ইফতার করেছে। সেখানে গিয়ে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য অনুনয় বিনয় করেছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আসলে দোষটা কূটনীতিকদের চেয়েও আমাদের অনেকের অনেক বেশি, কারণ আমরা গিয়ে তাদের হাতে পায়ে ধরি একটু কিছু বলার জন্য, আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য। এটি আসলে দেশবিরোধী এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শামিল।’

 

গণমাধ্যম স্বাধীন আছে, অপসাংবাদিকতা কেউ সমর্থন করে না : তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী সাংবাদিকদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করবে না বলার পর কিছু বড় পত্রিকায় ব্যানার হেডিং দিয়েছিল ‘পদ্মা সেতু আর হচ্ছে না’। কিন্তু বাংলাদেশে পদ্মা সেতু হয়েছে নিজেদের টাকায়। সে জন্য দেশের এসব বিষয়ে সাংবাদিক বন্ধুদের সতর্ক থাকতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষকে সঠিক তথ্য পেতে এবং সঠিক চিন্তা করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। একইসাথে মানুষকে বিশ্বপরিস্থিতিও জানাতে সহায়তা করে।’

হাছান মাহ্‌মুদ বলেন, ‘আমাদের সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে এবং তা অব্যাহত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। স্বাধীনতার নামে যদি আমরা কেউ অপসাংবাদিকতা করি তাহলে দেশের আপামর জনগণ এবং সাংবাদিক সমাজ নিশ্চয় সেটিকে সমর্থন করে না। সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে, সাংবাদিকতার নামে রাজনীতি করা- সেটি যে সমীচীন নয় সে বিষয়েও নিশ্চয়ই আপনারা আমার সাথে একমত হবেন।’

এ সময় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান এবং জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সফর আলী উপস্থিত ছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button